আয়কর হচ্ছে ব্যক্তি বা সত্ত্বার আয় বা লভ্যাংশরে উপর প্রদেয় কর । আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর আওতায় কর বলতে অধ্যাদেশ অনুযায়ী প্রদেয় আয়কর, অতিরিক্ত কর, বাড়তি লাভের কর, এতদসংক্রান্ত জরিমানা, সুদ বা আদায় যোগ্য অর্থকে বুঝায়। অন্য ভাবে বলা যায় যে, কর হচ্ছে রাষ্ট্রের সকল জনসাধারনের স্বার্থে রাষ্ট্রের ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারকে প্রদত্ত বাধ্যতামূলক অর্থ।
র্অথ আইন ২০১৫ এর আওতায় প্রত্যেক ব্যক্তি করদাতা (অনিবাসী বাংলাদেশী সহ), হিন্দু যৌথ পরিবার, অংশীদারী ফার্ম, ব্যক্তি সংঘ এবং আইনের দ্বারা সৃষ্ট কৃত্রিম ব্যক্তির আয়ের সীমা ২,৫০,০০০/= টাকার উপরে হলে আয়কর প্রদানের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবেন। তবে
(১) মহিলা এবং ৬৫ বৎসর বা তদুর্ধ বয়সের ব্যক্তি করদাতা আয় ৩,০০,০০০/= টাকা এর উপরে হলে তিনি আয়কর প্রদানের উপযুক্ত হবনে।
(২) প্রতিবন্ধি করদাতা আয় ৩,৭৫,০০০/= টাকা এর উপরে হলে তিনি আয়কর প্রদানের উপযুক্ত হবেন।
(৩) গেজেট ভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার আয় সীমা ৪,২৫,০০০/= টাকা এর উপরে হলে তিনি আয়কর প্রদানের উপযুক্ত হবেন।
আয়কর হচ্ছে ব্যক্তি বা সত্ত্বার উপর সরকার কর্তৃক আরোপিত কর, যা আয় বা লভ্যাংশের পরিমান ভেদে পরিবর্তিত হয়। প্রগতিশীল কর হচ্ছে সেই কর ব্যবস্থা যাতে করদাতার আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে করহার বৃদ্ধি হয়। আয়কর আরোপিত হয় করদাতার কর পরিশোধ করার ক্ষমতার উপর। তাই আয়করকে প্রগতিশীল কর বলা হয়।
আয়কর অধ্যাদশে ১৯৮৪ অনুযায়ী আয়ের খাত সমূহ নম্নিরূপ:
আয়কর অত্যাদেশ ১৯৮৪ এর আওতার দুই ধরনরে কর আরোপ করা হয়
১) ব্যক্তিগত আয় কর
২) কর্পোরেট আয়কর
অর্থ আইন ২০১৫ মোতাবেক সাধারণভাবে করমুক্ত আয়ের সীমা ১৫০০০০/০০। করমুক্ত আয়ের সীমা অতিক্রম করলে করদাতাকে এলাকা ভেদে ন্যূনতম যে কর পরিশোধ করতে হয় তাকে ন্যূনতম কর বলে। ন্যূনতম করের পরিমান যথাক্রমে ৫০০০/০০ (ঢাকা ও চট্রগ্রাম সিটিকর্পোরেশন এরিয়া), ৪০০০/০০(অন্য সিটিকর্পোরেশন এরিয়া), ৩০০০/০০(সিটিকর্পোরেশন এর বাইরে অন্য যেকোনো এরিয়া)
অর্থ আইন ২০১৫ এর আওতায় প্রত্যেক ব্যক্তি করদাতা উল্লেখ থাকলেও করদাতার সুনির্দিষ্ট বয়সসীমা উল্লেখ নেই। তবে মহিলা এবং ৬৫ বছর বা তদুর্ধ্ব বয়সের ব্যক্তি, প্রতিবন্ধীদের এবং গেজেট ভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তি যোদ্ধাদের কর মুক্তির সীমা ভিন্ন ভাবে উল্লেখ রয়েছে। তাই আয়সীমা ২,৫০,০০০/= টাকা অতিক্রম করলে উক্ত আয়ের উপর কর প্রযোজ্য, সে ক্ষেত্রে বয়স বিবেচ্চ্য নয়।
আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর আওতায় ন্যূনতম করমুক্ত আয়ের সীমা অতিক্রম করলে কিংবা ধারা 75(1A) তে বর্ণিত তালিকার ক্ষেত্রে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক না, রিটার্ন দাখিলের জন্য একজন করদাতাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অন্তর্গত কোন আয়কর কমিশনারেটের অধীনে সার্কেলে থেকে ১২ ডিজিটের TIN গ্রহণ করে নবিন্ধতি হতে হয় । একেই আয়কর নিবন্ধন বলে।
একজন করদাতাকে নিবন্ধনের মাধ্যমে করদাতা হিসাবে সনাক্ত করা হয়। ব্যক্তি করদাতা (অনিবাসী বাংলাদেশী সহ), হিন্দু যৌথ পরিবার, অংশীদারী ফার্ম, ব্যক্তি সংঘ এবং আয়কর আইনের দ্বারা সৃষ্ট কৃত্রিম ব্যক্তির আয়ের সীমা ২,৫০,০০০/= টাকার উপরে হলে নিবন্ধন প্রয়োজন। নিবন্ধিত করদাতা বছর শেষে রিটার্ন জমা দেওয়ার মাধ্যমে বাৎসরকি আয়, ব্যয় ও সঞ্চয় র্বণনা করেন।
নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে আয়কর নিবন্ধন প্রয়োজন:
ই-টিআইএন মানে ইলেকট্রনকি ট্যাক্স আইডেনটিফিকেশন নাম্বার, ইহা আয়কর নিবন্ধনের আধুনিক সংস্করন। ইহা ১২ ডিজিটের ১টি নম্বর। একজন করদাতাকে সহজে, ঘরেবসে অনলাইনে নিবন্ধন পেতে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। www. incometax.gov.bd এই সাইট গেলে ই-টিআইএন নিবন্ধন নেওয়া যাবে।
আপনি ই-টিআইএন এর জন্য www. incometax.gov.bd এই সাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন এবং নিবন্ধন নিতে পাবেন।
ধরনের উপর নির্ভর করবে টিআইএন সার্টিফিকেট পেতে কি কি তথ্য লাগবে নিম্নে ছক আকারে দেওয়া হলোঃ
Individual প্রাপ্ত বয়স্ক: করদাতার নাম, বৈধ্য জাতীয় পরিচয়পত্র, নম্বর, জন্ম তারিখ (জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী)
Individual অপ্রাপ্ত বয়স্ক: করদাতার নাম, অভিবাবকের নাম, অভিবাবকের টিআইএন, করদাতার ছবি( সফট কপি পাসপোর্ট সাইজের)
বিদেশী, বাংলাদেশি without NID: পাসপোর্ট নম্বর, পাসপোর্ট ইস্যুর তারিখ, ভিসা নম্বর, ভিসা ইস্যুর তারিখ, কর দাতার ছবি (সফট কপি, পাসপোর্ট সাইজ)
কোম্পনির নাম (নিবন্ধন অনুযায়ী) নিবন্ধন নম্বর ও তারিখ।
ফার্মে (Registered): ফার্মের নাম (নিবন্ধন অনুযায়ী), নিবন্ধন নম্বর ও তারিখ।
ফার্মে (Unregistered): ফার্মের পার্টনারদের টিআইএন নম্বর এবং তাদের নাম।
Other (AOP, HUF local Authority, AJP: Authorized person / কর্তা ব্যক্তির টিআইএন নম্বর
প্রত্যেক শ্রেণীর করদাতার আয়কর অধীক্ষেত্রে নির্ধারনের কিছু পদ্ধতি রয়েছে যেমন করদাতার কর্মস্থল, করদাতার নিয়োগকারী প্রতিষ্টান, চাকুরির/ব্যবসার ধরন, মূল আয়ের উৎস ইত্যাদির বিবেচনায় কর অধীক্ষেত্রে নির্বাচিত করা হয়। বর্তমানে www.incometax.gov.bd ওয়েব সাইটে গিয়ে Jurisdiction Finder বাটনে ক্লিক করে প্রয়োজনিয় তত্ত্ব প্রদান করিলে ওয়েব সাইটি সয়ংক্রিয় ভাবে করদাতার আধিক্ষেত্র প্রদর্শন করিবে।
এছাড়াও নতুন করদাতা অনলাইনে টিঅইএন আবেদন করিলে টিঅইএন সনদের সঙ্গে কর অঞ্চল ও কর সার্কেল উল্লেখ থাকবে। করদাতাকে স্বশরীরে অধীক্ষেত্র নির্ধারন বা সার্কেলে গিয়ে আবেদন করার প্রয়োজন নেই।
একজন করদাতা কর প্রদানের উদ্দেশ্যে কোন সার্কেলে আবেদন করিলে সংশ্লিষ্ট সার্কেল থেকে উপকর কমিশনার কর্তিক করদাতা সনাক্ত করতে যে সনদ প্রদান করা হয় তাকে টিআইএন সনদ বলে।
করদাতা পূর্ববর্তী কর বর্ষের আয়কর রিটার্ন জমাদিলে কর সার্কেল কর্তিক যাচাই বাছাই ও মূল্যায়ন শেষে করদাতাকে সংশ্লিষ্ট সার্কেলের উপকর কমিশনার কর্তিক যে সনদ প্রদান করা হয় তাকে আয়কর সনদ বলে।
আপনি www.incometax.gov.bd ওয়েব সাইট থেকে খুব সহজে ঠিকানা, মোবাইল নম্বও ও ইমেইল এড্রেস পরিবর্তন করতে পারবেন। উক্ত ওয়েব সাইট Login করে Change Contact মেনুতে ক্লিক করুন। স্ক্রিনে নতুন ফর্ম দেখতে পাবেন।প্রয়োজনীয় পরিবর্তন শেষে নিচে কেন তথ্য পরিবর্তন করেছেন তার কারণ “Update Resoon” বক্সে লিখুন। অত:পর Save বাটনে ক্লিক করুন। আপনার পরিবর্তিত তথ্য ডাটাবেইজে সংরক্ষিত হয়ে যাবে।
আপনার আয় আয়কর আরোপ যোগ্য সীমার নিচে নেমে গেলে এবং যদি আপনার মনেহয় নিকট ভবিষ্যতে আয়সীমা ন্যুনতম আয়কর প্রদানের আওতায় আসবে না তাহলে আপনি সংশ্লিষ্ট সার্কেলের উপকর কমিশনার বরাবর টিআইএন বাতিলেন জন্য কারন ব্যাখ্যা করে আবেদন করতে পারেন। উপকর কমিশনার Inspection বা Hearing এর মাধ্যমে অথবা আবেদনের উপর ভিত্তি করে আপনার টিআইএন এর কার্যক্রম স্থগিত বা বাতিল করতে পারেন।
সরকার কর্তিক ঘুষিত আয় যা অতিক্রম করিলে আয়কর প্রদানের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবেন। আয়কর আরোপযোগ্য সীমা হচ্ছে:
১) ব্যক্তি করদাতা (অনিবাসী বাংলাদেশী সহ), হিন্দু যৌথ পরিবার, অংশীদারী ফার্ম, ব্যক্তি সংঘ এবং আইনের দ্বারা সৃষ্ট কৃত্রিম ব্যক্তির আয়ের সীমা ২,৫০,০০০/= টাকা
(২) মহিলা এবং ৬৫ বৎসর বা তদুর্ধ্ব বয়সের ব্যক্তিদের আয়ের সীমা ৩,০০,০০০/= টাকা
(৩) প্রতিবন্ধি করদাতাদের আয়ের সীমা ৩,৭৫,০০০/= টাকা
(৪) গেজেট ভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তি যোদ্ধাদের আয়ের সীমা ৪,২৫,০০০/= টাকা
অর্থ আইন ২০১৫ এর আওতায় প্রত্যেক ব্যক্তি করদাতা (অনিবাসী বাংলাদেশী সহ), হিন্দু যৌথ পরিবার, অংশীদারী ফার্ম, ব্যক্তি সংঘ এবং আইনের দ্বারা সৃষ্ট কৃত্রিম ব্যক্তির আয়ের সীমা ২,৫০,০০০/= টাকার উপরে হলে আয়কর প্রদানের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবেন। তবে
(১) মহিলা এবং ৬৫ বৎসর বা তদুর্ধ্ব বয়সের ব্যক্তিদের আয়ের সীমা ৩,০০,০০০/= টাকা এর উপরে হলে তিনি আয়কর প্রদানের উপযুক্ত হবেন। (২) প্রতিবন্ধি করদাতাদের আয়ের সীমা ৩,৭৫,০০০/= টাকা এর উপরে হলে তিনি আয়কর প্রদানের উপযুক্ত হবেন।
৩) গেজেট ভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তি যোদ্ধাদের আয়ের সীমা ৪,২৫,০০০/= টাকা উপরে হলে তিনি আয়কর প্রদানের উপযুক্ত হবেন।
২০১৫-২০১৬ কর বছরের জন্য এরূপ করদাতাদের আয়ের উপর প্রযোজ্য কর হার নিম্নরূপে পুনর্বিন্যাস করা হয়েছেঃ-
|
মোট আয় |
কর হার |
(ক) |
প্রথম ২,৫০,০০০/- টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর |
শূণ্য |
(খ) |
পরবর্তী ৪,০০,০০০/- টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর |
১০% |
(গ) |
পরবর্তী ৫,০০,০০/- টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর |
১৫% |
(ঘ) |
পরবর্তী ৬,০০,০০০/- টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর |
২০% |
(ঙ) |
পরবর্তী ৩০,০০,০০০/- টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর |
২৫% |
(চ) |
অবশিষ্ট মোট আয়ের উপর |
৩০% |
পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানীর ক্ষেত্রে বিদ্যমান কর হার ২৫% নির্ধারন করা হয়েছে। তাছাড়া পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানী ৩০% এর অধিক নগদ লভ্যাংশ প্রদান করলে ১০% হারে কর রেয়াত সুবিধা সংক্রান্ত পূর্বের বিধানটি রহিত করা হয়েছে। অপরদিকে ১০% এর কম লভ্যাংশ ঘোষনা করলে অথবা বাংলাদেশ সিকউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঘোষিত লভ্যাংম প্রদান না করলে পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানীর কর হার ৩৫% এ নির্ধারণ করার বিধানও রহিত করা হয়েছে।
তবে, নন-পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানীর করহার গত বছরের ন্যায় ৩৫% বহাল রয়েছে।
২০১৫-২০১৬ কর বছরের জন্য কোম্পানীর আয়করের হার (লভ্যাংশ আয় ও মূলধনী আয় ব্যতীত) নিম্নরূপঃ
|
কোম্পানীর ধরণ |
কর হার |
(অ) |
নন-পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানী (স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভূক্ত নয় এমন কোম্পানী) |
৩৫% |
(আ) |
পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানী (স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভূক্ত কোম্পানী) |
২৫% |
(ই) |
ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ (মার্চেন্ট ব্যাংক ব্যতীত) (i)পুজিঁবাজারের তালিকাভূক্ত হলে (ii)পুজিঁবাজারের তালিকাভূক্ত না হলে (iii)সরকার কর্তৃক ২০১৩ সালে অনুমোদিত ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করের হার |
৪০% ৪২.৫% ৪০% |
(C) |
মার্চেন্ট ব্যাংক |
৩৭.৫% |
(উ) |
সিগারেট প্রস্তুতকারক কোম্পানী |
৪৫% |
(E) |
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানী |
৪৫% |
অন্যান্য কর হারঃ
(অ) |
কোন কোম্পানী কর্তৃক প্রাপ্ত লভ্যাংশ আয়ের ক্ষেত্রে/বিদেশী কোম্পানীর মুনাফা প্রত্যাবাসন, যা লভ্যাংশ হিসেবে গণ্য, এর উপর |
২০% |
(আ) |
কোম্পানী ব্যতীত সিগারেট প্রস্তুতকারক অন্যান্য শ্রেণীর করদাতার সিগারেট উৎপাদন পূর্বক বিক্রয় ব্যবসার আয়ের উপর |
৪৫% |
(ই) |
সমবায় সমিতির আয়ের উপর |
১৫% |
অনিবাসী বাংলাদেশী ব্যতীত বাংলাদেশে অনিবাসী এমন ব্যক্তি-করদাতার কর হার ৩০% বলবৎ আছে। তবে অনিবাসী ব্যক্তি-করদাতা বাংলাদেশী নাগরিক হলে তাঁর আয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশী নিবাসীদের জন্য প্রযোজ্য হারে অর্থাৎ ০%, ১০%, ১৫%, ২০%, ২৫% ও ৩০% আয়কর এবং সারচার্জ প্রদেয় হবে।
ট্র্যাক্স ডিডাকসান এটসোর্স (উৎসে কর কর্তন)। করদাতার আয় থেকে উৎসে কর্তনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সত্তা কর্তিক উৎস কর কেটে রাখা হলে তা প্রচলিত রিটার্ন ফরম আইটি-১১গ এর ১৬ নং ক্রমিকে আয়বছরে উল্লেখ করতে হবে। যেমন বেতন, ব্যাংক সুদ, গৃহ-সম্পত্তির বার্ষিক ভাড়া, পেশাগত ফি, ইত্যাদি থেকে উৎসে কেটে রাখা কর এখানে দেখাতে হবে। উৎস কেটে রাখা করের স্বপক্ষে কর কর্তনকারী কর্তৃপক্ষের সার্টিফিকেট রিটার্নের সাথে দাখিল করতে হবে।
অগ্রিম আয়কর (এআইটি) এক ধরনের কর যা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আমদানি করা পণ্যের উপর অর্পিত হয়। অনিবন্ধিত আমদানিকারকদের করের আওতায় আনতে ২০০৭ এ এই কর ব্যবস্তা চালু করা হয়। উল্লেখ্য যে, Return জমা দেয়ার সময় এআইটি একই ভাবে withholding tax এর মতই গণ্য হবে।
কর অবকাশ (ট্যাক্স হলিডে) হচ্ছে অস্থায়ী কর হ্রাস বা বর্জন ব্যবস্তা । সেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান কে কর অবকাশ দেয়া হয়েছে যারা শিল্প অঙ্গীকার করেছে এবং সকল শর্ত পূরণ করে ১ জুলাই ২০১১ থেকে ৩০ জুন ২০১৯ এর মধ্যে ভৌত অবকাঠামো প্রতিষ্ঠিত করেছে।
Industrial Undertaking Eligible for Tax holiday :
Physical Infrastructure Eligible for Tax holiday:
কর হ্রাস যার মাধ্যমে কোন বাক্তি বা প্রতিষ্ঠান কে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে উত্সাহিত করবে।
কর নিধারন হচ্ছে মোট আয় ও কর পরিগনার একটি পদ্ধতি। আয়বছর শেষে করদাতা দুইটি প্রচলিত পদ্ধতির (সাধারন,সার্বজনীন স্বনির্ধারন) যে কোন একটি পদ্ধতিতে আয়কর দাখিল করতে পারেন।
যদি করদাতা সাধারন পদ্ধতি উল্লেখ করে রিটার্ন জমাদেন সেক্ষেত্রে উপকর কমিশনার শুনানী পূর্বক করনির্ধারন করবেন এবং নিষ্পত্তি করবেন।
যদি করদাতা সার্বজনীন স্বনির্ধারনী পদ্ধতি উল্লেখ করে রিটার্ন জমা দেন সেক্ষেত্রে করদাতা নিজের আয় নিজে নিরূপন করে প্রযোজ্য আয়কর পরিশোধ করবেন। রিটার্ন দাখিলের পর উপকর কমিশনার এর দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা করদাতাকে প্রাপ্তি স্বীকার পত্র প্রদান করবেন। তবে 82BB ধারায় অর্থ আইন ২০১৫ এর মাধ্যমে আনীত সংশোধনী অনুযায়ী উপকর কমিশনার কয়েকটি ক্ষেত্র্রে নির্দ্দিষ্ট ক্রুটি বিচ্যুতি চিহ্নিতকরণ ও এর কারণে কম কর পরিশোধ করা হলে তা আদায়ের লক্ষে রিটার্নটি Process করবেন।
সাধারণতঃ আয় বর্ষের পরবর্তী বর্ষকে কর বর্ষ বলা হয়। যেমন, ১লা জুলাই ২০১৪ হতে ৩০ শে জুন ২০১৫ সময়কাল পর্যন্ত উপার্জিত আয়ের আয়বর্ষ হইবে ২০১৪-২০১৫ এবং করবর্ষ হইবে পরবর্তী বর্ষ অর্থাৎ ২০১৫-২০১৬ ।
বর্তমানে আয়কর রির্টান দাখিলের দুটি পদ্ধতি প্রচলিত আছে, যথা-
(১) সাধারণ পদ্ধতি এবং
(২) সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতি।
করদাতা তার নিজের আয় নিজে নিরূপন করে প্রযোজ্য আয়কর পরিশোধ করবেন - এটি বিশ্বব্যাপী একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে করদাতা রিটার্ন দাখিলকরনে বিনা প্রশ্নে আয়কর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক রিটার্নটি গৃহীত হয়। রিটার্ন দাখিলের পর উপ কর কমিশনার বা তার দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা কর্তৃক করদাতাকে প্রদত্ত প্রাপ্তি স্বীকারপত্র কর নির্ধারণী আদেশ হিসেবে বিবেচিত হয়। করদাতা রিটার্ন ফরম পূরণ পর্যায়ে রিটার্নের প্রথম পৃষ্ঠায় সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতির ঘরে টিক প্রদান করলে কিংবা রিটার্নের উপরে সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতি উল্লেখ করলে দাখিলকৃত রিটার্নটি সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে আওতায় গৃহীত হবে।
বিড়ির ব্যান্ডরোল বিক্রয় সম্পর্কিত বিধান:
আয়কর অধ্যাদেশের ধারা 52B এর বিদ্যমান বিধান অনুসারে হাতে প্রস্তুতকৃত সিগারেট, যা বিড়ি নামে পরিচিত, এর ব্যান্ডরোল বিক্রয়কালে ব্যান্ডরোল বিক্রেতা ১০% হারে উৎস কর সংগ্রহ করেন যা উক্ত ব্যবসায় চূড়ান্ত করদায় পরিশোধ হিসেবে বিবেচিত হয়। অর্থ আইন, ২০১৫ এর মাধ্যমে ধারা ৫২ই এর বিদ্যমান বিধানটি ধারা 52B এর উপ-ধারা (1) হিসেবে সংখ্যায়িত করার প্রেক্ষিতে ধারা 82C এর উপ-ধারা (2) এর ক্লজ (d) তে ধারা 52B এর স্থলে ধারা 52B এর উপ-ধারা (1) সংযোজন করা হয়েছে। এর ফলে, বিড়ির ব্যান্ড রোল সরবরাহকালে উৎসে সংগৃহীত কর উক্ত ব্যবসায় আয়ের ক্ষেত্রে পূর্বের ন্যায় চূড়ান্ত করদায় হিসেবে গণ্য হবে।
নিম্নে উল্লিখিত খাতগুলি থেকে যদি ব্যক্তি করদাতা (অনিবাসী বাংলাদেশী সহ), হিন্দু অবিভক্ত পরিবার, অংশীদারী ফার্ম, ব্যক্তি সংঘ এবং আইনের দ্বারা সৃষ্ট কৃত্রিম ব্যক্তির আয়ের সীমা ২,৫০,০০০/= টাকার উপরে হলে কর যোগ্য আয় বলে বিবেচিত হবে।
খাতগুলি হলো:
১। বেতনাদি
২। নিরাপত্তা জামানতের উপর সুদ
৩। গৃহ সম্পত্তির আয়
৪। কৃষি আয়
৫। ব্যবসা বা পেশার আয়
৬। ফার্মের আয়ের অংশ
৭। স্বামী / স্ত্রী বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানের আয়
৮। মূলধনী মুনাফা
৯। অন্যান্য উৎস হতে আয়।
ব্যক্তি করদাতার করমুক্ত আয়ের কয়েকটি খাত নীচে দেয়া হলোঃ
(ক) সরকারী চাকুরিজীবী করদাতা যদি চাকুরীর দায়িত্ব পালনের জন্য কোন বিশেষ ভাতা, সুবিধা বা আনুতোষিক (perquisite) পান;
(খ) পেনশন;
(গ) অংশীদারী ফার্ম হতে পাওয়া মূলধনী মুনাফার অংশ;
(ঘ) ২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত গ্র্যাচুইটি প্রাপ্তি;
(ঙ) প্রভিডেন্ট ফান্ড এ্যাক্ট, ১৯২৫ অনুযায়ী উক্ত ফান্ড থেকে প্রাপ্ত অর্থ;
(চ) স্বীকৃত প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে প্রাপ্ত অর্থ;
(ছ) স্বীকৃত সুপারএ্যানুয়েশন ফান্ড থেকে প্রাপ্ত অর্থ;
(জ) বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (২০০৬ সনের ৪২ নং আইন) এর আওতায় কোন শ্রমিক কর্তৃক ওয়ার্কার্স পার্টিসিপেশন ফান্ড থেকে প্রাপ্ত অর্থ;
(ঝ) মিউচ্যুয়াল ফান্ড অথবা ইউনিট ফান্ড থেকে প্রাপ্ত ২৫,০০০/- টাকা পর্যন্ত আয় (সুদ, মুনাফা বা ডিভিডেন্ড);
(ঞ) স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোন কোম্পানী থেকে প্রাপ্ত নগদ লভ্যাংশ খাতের আয় ২৫,০০০/- টাকা পর্যন্ত;
(ট) সরকারি নিরাপত্তা জামানতের সুদ যা সরকার করমুক্ত বলে ঘোষনা করেছে;
(ঠ) রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলার পাহাড়ী আদিবাসীর দ্বার এই জেলাগুলোতে পরিচালিত আর্থিক কর্মকান্ডের ফলে প্রাপ্ত আয়,
(ড) রপ্তানী ব্যবসা হতে প্রাপ্ত আয়ের ৫০%;
(ঢ) আয়ের একমাত্র উৎস ‘কৃষি খাত’ হলে কৃষি খাত হতে আয় ২,০০,০০০/- টাকা পর্যন্ত;
(ণ) Software development বা Nationwide Telecommunication Transmission Network (NTTN) বা Informantion Technology Enabled Services (ITES) ব্যবসার আয়;
(ত) হাঁস-মুরগীর খামার হতে অর্জিত আয়। তবে এ ক্ষেত্রে অর্জিত আয় ১,৫০,০০০/- টাকা এর অধিক হলে অর্জিত আয়ের ১০% সরকারী বন্ড ক্রয়ে বিনিয়োগ করতে হবে।এ বিধান কর বছর ২০১৫-২০১৬ এর জন্য প্রযোজ্য। ২০১৬-২০১৭ কর বছর হতে এ খাতের আয়ের করযোগ্যতার বিষয়ে ১৬/০৮/২০১৫ খ্রিস্টাব্দ তারিক একটি পৃথক প্রজ্ঞাপন জারী করা হয়েছে;
(থ) হাঁস-মুরগী, চিংড়ী ও মাছের হ্যাচারী (hatchery) এবং মৎস চাষ হতে অর্জিত আয় এর ক্ষেত্রে প্রথম ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ‘শূন্য ‘হারে, পরবর্তী ১০ লক্ষ টাকা আয়ের উপর ৫% হাওে এবং অবশিষ্ট আয়ের উপর ১০% হাওে কর প্রদেয় হবে;
(দ) কতিপয় ক্ষেত্র ব্যতীত ব্যক্তি-করদাতা কর্তৃক স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পনীর শেয়ার বিক্রয় হতে অর্জিত মূলধনী মুনাফা;
(ধ) হস্তশিল্পজাত দ্রব্যাদি রপ্তানী থেকে উদ্ভুত আয় ;
(ন) জিরো কুপন বন্ড থেকে উদ্ভুত আয়;
(প) ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ড বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইইএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড, পাউন্ড স্টার্লিং প্রিমিয়াম বন্ড, পাউন্ড স্টার্লিং ইনভেস্টমেন্ট বন্ড, ইউরো প্রিমিয়াম বন্ড ও ইউরো ইনভেস্টমেন্ট বন্ড হতে প্রাপ্ত সুদ আয়।
(ফ) পেনশনার সঞ্চয়পত্র থেকে প্রাপ্ত সুদ, যেখানে বছরে সর্বমোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৫,০০,০০০/- টাকা অধিক নয়।
করমুক্ত আয়সমূহ করদাতার মোট আয়ের অন্তর্ভূক্ত হবে না। এটি রিটার্নের ১৮ নং ক্রমিকে করমুক্ত আয়ের কলামে প্রদর্শন করতে হবে।
একজন করদাতা নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে বিনিয়োগ কিংবা দান করলে তিনি বিনিয়োগ ও দানকৃত অংকের ১৫% সরাসরি আয়কর রেয়াত পাবেন।
বিনিয়োগের খাত: একজন করদাতার বিনিয়োগ ও দানের খাতের তালিকা নীচে দেয়া হলো:
দান:
** কর রেয়াতের জন্য এরূপ বিনিয়োগ ও দানের পরিমান মোট আয়ের (স্বীকৃত --- তহবিলে --- চাদা, ৮২ সি ধারায় নির্ণিত চুড়ান্ত করদায় এবং হ্রাসকৃত করহার প্রযোজ্য এমন আয় থাকলে তা বাদে) ৩০ % অথবা ১,৫০,০০,০০০/= টাকা অথবা প্রকৃত বিনিয়োগ এ তিনটির মধ্যে যেটি কম তার বেশি হতে পারবেনা
কর রেয়াত পাওয়ার উপযুক্ত বিনিয়োগের খাত:
করদাতার বিনিয়োগ খাতের তালিকা নীচে দেয়া হলো:
বাবার মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি সন্তানদের মধ্যে উত্তরাধিকার সূত্রে বন্টন হবে। এ ক্ষেত্রে উক্ত সম্পত্তি উত্তরাধিকারী দের সম্পত্তি হিসাবে অন্তরভূ্ক্তি করিতে প্রমানপত্র হিসাবে বন্টন নামা দলিল বা দানপত্র দলিল বা অন্য কোন যৌক্তিক প্রমান পত্র থাকতে হবে। যেহেতু উক্ত সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত তাই এই সম্পদের উপর কোন কর ধার্য হইবে না। এ ক্ষেত্রে উপকর কমিশনার সর্বশেষ সিদ্ধান্ত গ্রহন করবেন।
বাবার মৃত্যুর পর টিআইএন বাতিল করার প্রয়োজনীয়তা নির্ভর করে তার উত্তরাধিকারীদের উপর। যদি এমন কোন ব্যবসা বাবার নামে থাকে যা টিআইএন বাতিল করিলে ব্যবসা সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র বাতিল করে নতুন করে করতে হয় কিংবা বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হয় সে ক্ষেত্রে টিআইএন বাতিল না করে উত্তরাধিকারীরা প্রতিবছর বাৎসরিক রিটার্ন জমা দিয়ে Assessment করাতে পারবেন। আর যদি টিআইএন এর কোন প্রয়োজনীয়তা না থাকে তাহলে উত্তরাধিকারীরা উপকর কমিশনার বরাবর টিআইএন বাতিলের জন্য আবেদন করিতে পারেন। উপকর কমিশনার Inspection বা Hearing এর মাধ্যমে অথবা আবেদনের উপর ভিত্তি করে আপনার টিআইএন এর কার্যক্রম স্থগিত বা বাতিল করতে পারেন।
প্রত্যেক শ্রেণীর করদাতার রির্টান দাখিলের জন্য আয়কর সার্কেল নির্দিষ্ট করা আছে। যেমন : A, B এবং C অক্ষরগুলো দিয়ে ঢাকা সিভিল জেলার অবস্থিত যে সকল বেসামরিক সরকার কর্মকতা/কর্মচারী ও পেনশনভুক্ত কর্মকর্তা/ কর্মচারীর নাম শুরু হয়েছে তাদেরকে কর অঞ্চল-৪, ঢাকা এর কর সার্কেল-৭১ এ রিটার্ন জমা দিতে হবে। পুরোনো করদাতারা তাদের বর্তমান সার্কেলে রিটার্ন জমা দেবেন। নতুন করদাতারা তাদের নাম, চাকুরীস্থল বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানার ভিত্তিতে নির্ধারিত সার্কেলে ১২ সংখ্যার টিআইএন (e-TIN) উল্লেখ করে আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন। করদাতারা প্রয়োজনে কাছাকাছি আয়কর অফিস বা কর পরামর্শ কেন্দ্র থেকে আয়কর রিটার্ন দাখিল সংক্রান্ত সার্কেল অফিস সম্পর্কে জানতে পারবেন।
কোম্পানী ব্যতীত অন্যান্য সকল শ্রেণীর করদাতার ক্ষেত্রে প্রতি বছর ১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর এই ৩ মাস সময়সীমার মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করা সম্বব না হলে একজন করদাতা রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য উপযুক্ত কারণ উল্লেখ করে উপ কর কমিশনারের কাছে সময়ের আবেদন করতে পারেন। সময় মঞ্জুর হলে বর্ধিত সময়ের মধ্যে সাধারণ অথবা সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতির আওতায় রিটার্ন দাখিল করা সম্ভব।
নির্ধারিত সময়ে আয়কর রিটার্ন দাখিল না করিলে, সংশ্লিষ্ট করদাতাকে আত্মাপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়ার লক্ষ্যে আবশ্যিকভাবে ধারা-১৩০ মোতাবেক নোটিশ প্রদান সাপেক্ষে খেলাপী করদাতার সর্বশেষ আরোপিত আয়করের ১০% অথবা কমপক্ষে ১,০০০.০০ টাকা ও পরবর্তী প্রতি খেলাপী দিবসের জন্য ৫০.০০ টাকা, এ দু’টি মধ্যে যেটি বেশী, উপ-কর কমিশনার কর্তৃক তাহা জরিমানা আরোপ করিতে পারিবেন। শর্ত থাকে যে-
(১) উপ ধারা-124(1) অনুযায়ী কোন নতুন ব্যক্তি-করদাতা, যাহার আয়ের উপর ইতোপূর্বে কখনো করারোপিত হয় নাই, তাঁহার ক্ষেত্রে আরোপযোগ্য মোট জরিমানা পরিমান ৫,০০০/- টকার বেশি হইবে না;
(২) উপ ধারা -124(1) অনুযায়ী কোন নতুন ব্যক্তি-করদাতা, যাহার আয়ের উপর ইতোপূর্বে করারোপিত হইয়াছে এমন কোন পুরোনো ব্যক্তি-করদাতার ক্ষেত্রে এইরূপ জরিমানার পরিমাণ তাঁহার সর্বশেষ নিরূপিত আয়ের উপর ধার্যকৃত করের ৫০% বা ১,০০০/- টাকা, দু’টির মধ্যে যেটি বেশি, তাহা জরিমানার আরোপযোগ্য হইবে|
আয়কর কর্তৃপক্ষের নিকট করদাতার বার্ষিক আয়ের সংক্ষিপ্ত বিবরণ উপস্থাপন করার মাধ্যম হচ্ছে আয়কর রিটার্ন| আয়কর রিটার্ন জমার মাধ্যমে করদাতার বার্ষিক আয়-ব্যায় এবং সম্পদ ও দায়ের তথ্য দাখিল হয়| নির্ধারিত সময়ে আয়কর রিটার্ন দাখিল না করলে, সংশ্লিষ্ট করদাতাকে উপ-কর কমিশনার কর্তৃক জরিমানা আরোপের বিধান রয়েছে
(১) সাধারণ পদ্ধতি এবং
(২) সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতি।
সাধারণ পদ্ধতি
রিটার্নে সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতি উল্লেখ করা না হলে রিটার্নটি সাধারণ পদ্ধতির আওতায় দাখিলকৃত বলে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে রিটার্নে প্রদর্শিত আয়ের সমর্থনে যথোপযুক্ত তথ্য ও প্রমাণাদি না থাকলে করদাতার শুনানী গ্রহণপূর্বক মামলা নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে।
সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতি
করদাতা তার নিজের আয় নিজে নিরূপন করে প্রযোজ্য আয়কর পরিশোধ করবেন। এই পদ্ধতিতে করদাতা রিটার্ন ফরম পূরণ পর্যায়ে রিটার্নের প্রথম পৃষ্ঠায় সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতির ঘরে টিক প্রদান করলে কিংবা রিটার্নের উপরে সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতি উল্লেখ করলে দাখিলকৃত রিটার্নটি সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে আওতায় গৃহীত হবে। এই পদ্ধতিতে করদাতার রিটার্ন দাখিল করলে বিনা প্রশ্নে আয়কর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক রিটার্নটি গৃহীত হয়। রিটার্ন দাখিলের পর উপ কর কমিশনার বা তার দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা কর্তৃক করদাতাকে প্রদত্ত প্রাপ্তি স্বীকারপত্র কর নির্ধারণী আদেশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
আয়কর অধ্যাদেশের ধারা 75 (2)(c) আইনানুগ সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পূর্বেই যথাযথ কারণ উল্লেখ পূর্বক সময়ের আবেদন করা হলে করদাতার সংশ্লিষ্ট সার্কেলে উপকর কমিশনার নিজ ক্ষমতাবলে ২(দুই) মাস এবং পরিদর্শী অতিরিক্ত/যুগ্ম কর কমিশনারের অনুমোদনক্রমে আরও ২(দুই) মাস অর্থাৎ মাস অর্থাৎ সর্বমোট ৪ (চার) মাস পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করতে পারবেন।
অর্থ আইন, ২০১৫ এর মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশে বিদ্যমান ধারা 165B এর পরে একটি নতুন ধারা 165C সংযোজন করা হয়েছে। সংযোজিত এ নতুন ধারার বিধান অনুসারে বিনিয়োগ বোর্ড বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতিরেকে কোন বিদেশী নাগরিককে কাজে নিয়োগ আয়কর আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। কোন ব্যক্তি (person) বর্ণিত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতিরেখে কোন বিদেশী নাগরিককে কাজে নিয়োগ করলে উক্ত নিয়োগকারীর সর্বনিম্ন তিন মাস হতে সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত কারাদন্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আর্থিক দন্ড অথবা উভয় প্রকার দন্ড আরোপযোগ্য হবে।
করদাতাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়ার লক্ষ্যে আবশ্যিকভাবে ধারা-১৩০ মোতাবেক নোটিশ প্রদান সাপেক্ষে খেলাপী করদাতার সর্বশেষ আরোপিত আয়করের ১০% অথবা কমপক্ষে ১,০০০.০০ টাকা ও পরবর্তী প্রতি খেলাপী দিবসের জন্য ৫০.০০ টাকা, উপ-কর কমিশনার জরিমানা আরোপ করতে পারবেন। তবে অর্থ আইন ২০১৫ এর মাধ্যমে সংযোজিত প্রভাইসো মোতাবেক -
(১)কোন ব্যক্তি-করদাতা, যাহার আয়ের উপর ইতোপূর্বে কখনো করারোপিত হয় নাই, তাঁহার ক্ষেত্রে আরোপযোগ্য মোট জরিমানা পরিমান ৫,০০০/- টকার বেশি হইবে না;
(২)কোন ব্যক্তি-করদাতা, যাহার আয়ের উপর ইতোপূর্বে করারোপিত হইয়াছে এমন কোন পুরোনো ব্যক্তি-করদাতার ক্ষেত্রে এইরূপ জরিমানার পরিমাণ তাঁহার সর্বশেষ নিরূপিত আয়ের উপর ধার্যকৃত করের ৫০% বা ১,০০০/- টাকা, দু’টির মধ্যে যেটি বেশি, তাহার বেশি হইবে না|
আয়কর অধ্যাদেশের ধারা 184A এর উপ-ধারা (1) এর ক্লজ (1) এর বিদ্যমান বিধান অনুসারে কোন শেয়ার হোল্ডার কর্তৃক সংশ্লিষ্ট কোম্পানীর পরিচালক স্পন্সর পেপার হোল্ডার হওয়ার ক্ষেত্রে ১২ ডিজিটের টিআইএন গ্রহণের বাধ্যবাধকতা আছে। অর্থ আইন, ২০১৫ এর মাধ্যমে সংযোজিত ক্লজ (11) এর বিধান অনুসারে ১ জুলাই, ২০১৫ হতে কোন অনিবাসী বিদেশী নাগরিকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে কোন কোম্পানীর পরিচালক বা স্পন্সর শেয়ার হোল্ডারের পদের জন্য বাধ্যতামূলক ১২ ডিজিটের টিআইএন গ্রহণ করতে হবে না।
অর্থ আইন, ২০১৫ এর মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশে Section184A এর Sub-Section(1) এর Clause (w) এর পর নুতন Clause (x) সংযোজন করা হয়েছে । সংযোজিত এ Clause এর বিধান অনুসারে কোন সিটি কর্পোরেশন অথবা জেলা সদরের পৌরসভা এলাকায় অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল কারিকুলাম অনুযায়ী শিক্ষাদানরত কোন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ছাত্র / ছাত্রী ভর্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের কাছে উক্ত শিক্ষার্থীর মাতা বা পিতা বা অভিভাবকের ১২ ডিজিটের টিআইএন সম্বনিত সার্টিফিকেট / রিটার্নের প্রাপ্তি স্বীকার দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এরূপ সম্বনিত সার্টিফিকেট / রিটার্নের প্রাপ্তি স্বীকার পত্র প্রাপ্তির পর আবশ্যিকভাবে ১২ ডিজিটের টিএইঅন এর যথার্থতা যাচাই করবেন।
অর্থ আইন, ২০১৫ এর মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশে বিদ্যমান ধারা 165A এর পরে একটি নতুন ধারা 165AA সংযোজন করা হয়েছে। সংযোজিত নতুন ধারার বিধান অনুসারে কোন ব্যক্তির (person) দাখিলকৃত আয়কর রিটার্নের সাথে সংযুক্ত অডিট রিপোর্ট বা পরবর্তীতে দাখিলকৃত Audit Statment of Accounts এ Chartered Accountant এর প্রদত্ত স্বাক্ষর জাল বা নকল (fake) প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ক্ষেত্রে জেল বা জরিমানা অথবা উভয় দন্ড প্রযোজ্য হবে। এক্ষেত্রে কারাদন্ডের মেয়াদ সর্বনিম্ন তিন মাস হতে সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত বা সর্বোচ্চ এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত আর্থিক দন্ড অথবা উভয় প্রকার দন্ড আরোপযোগ্য ।